করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে যা যা করনীয়



বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস।

ইতিমধ্যে শতাধিক দেশে শনাক্ত হয়েছে এ ভাইরাসের উপস্থিতি।  বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত তিন বাংলাদেশি শনাক্ত হয়েছে। এরপর থেকেই দেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার জন্য আহব্বান জানিয়েছে। এদিকে সারাবিশ্বে সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনা ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে ইতোমধ্যে ‘মিউটেট করছে’, অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করছে।

ফলে এটি আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন, এ ভাইরাস একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে ছড়াতে পারে। এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটনায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। তবে এর পরিণামে দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া এবং মৃত্যু ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের দুই শতাংশ মারা গেছেন, হয়তো আরও মৃত্যু হতে পারে। তাছাড়া এমন মৃত্যুও হয়ে থাকতে পারে যা চিহ্নিত হয়নি।


করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ- করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হলো, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর এবং কাশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি শরীরে  প্রবেশের পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে।  প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তারপর  দেখা  দেয় শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট  দেখা দেয় এবং তখনই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

যেভাবে ছড়ায় এই ভাইরাস- মধ্য চীনের উহান শহর থেকে এই রোগের সূচনা। ৩১শে ডিসেম্বর এই শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ই জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। তবে ঠিক কীভাবে এর সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারেরনি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সম্ভবত  কোনও প্রাণী এর উৎস ছিল। প্রাণী  থেকেই  প্রথমে ভাইরাসটি কোনও মানুষের দেহে ঢুকেছে এবং তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে। এর আগে সার্স ভাইরাসের  ক্ষেত্রে  প্রথমে বাদুর এবং পরে গন্ধগোকুল থেকে মানুষের দেহে প্রবেশের নজির রয়েছে। আর মার্স ভাইরাস ছড়িয়েছিল উট থেকে।করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে উহান শহরে সামুদ্রিক একটি খাবারের কথা বলা হচ্ছে। শহরটির একটি বাজারে গিয়েছিল এমন ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই বাজারটিতে অবৈধভাবে বণ্যপ্রাণী বেচাকেনা হতো।বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হয়েছেন, এ ভাইরাসটি একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে দ্রুত ছড়াতে পারে। করোনা ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনেরদেহে ছড়ায়। সাধারণত ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে।

চিকিৎসা - ভাইরাসটি নতুন হওয়াতে এখনই এর কোনও টিকা বা  প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এমনকি এমন  কোনও চিকিৎসাও নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে মানুষকে নিয়মিত হাত ভালোভাবে ধোয়া নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে। হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা এবং ঠান্ডা ও ফ্লু আক্রান্ত মানুষ থেকে দূরে থাকারও পরামর্শ দিয়েছে তারা।

করোনার ঝুঁকি এড়ানোর ১৪ উপায়: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দ্বারা ঘোষিত করোনাভাইরাস সুরক্ষা টিপসগুলো, ভ্রমণ এড়ানো প্রথমত, কাশি, জ্বর, সর্দি বা হাঁচির মতো সমস্যা থাকে তবে যেকোনো ধরনের ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। জনবহুল এলাকা এড়িয়ে চলুন এমনও হতে পারে যে কোনো ব্যক্তির মধ্যে করোনা ভাইরাসের কোনো লক্ষণ নেই, সে স্বাভাবিক কিন্তু, তার মধ্যেও এই রোগের জীবাণু থাকতে পারে। কারণ এই সংক্রমণটি রোগীর মধ্যে ফুটে ওঠে ১৪ দিনের মধ্যে। সুতরাং, জনবহুল জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে কারণ কেউই জানেন না যে কার মধ্যে এই ভাইরাসটি আছে এবং আপনাকে সংক্রমিত করতে পারে। নিজের চিকিৎসা করান আপনি যদি করোনা ভাইরাস সংক্রামিত দেশ থেকে আসেন এবং ফ্লু-এর লক্ষণ ও শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় তবে, অবিলম্বে চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। দূরত্ব বজায় রাখুন যাদের ফ্লু বা  সর্দির লক্ষণ  রয়েছে তাদের  থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় ০.৫ মি  থেকে ২ মি দূরত্ব বজায়  রেখে কথা  বলতে হবে। হাত পরিষ্কার রাখুন কমপক্ষে ২০  সেকেন্ড ধরে সাবান এবং পানি বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ঘন ঘন হাত  ধুতে হবে। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে হবে।

প্রতিদিন আপনার বাড়ির চারপাশ,  টেবিল, টয়লেট, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সুইচ ও  স্টেশনারি জিনিস পরিষ্কার করার জন্য জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে। সংক্রামিত হাত দিয়ে  চোখ স্পর্শ করবেন না যখন  কোনো সংক্রামিত ব্যক্তি  কোনো মাস্ক ছাড়াই হাঁচি  দেয় বা কাশি হয়, তখন প্যাথোজেনগুলো ফোঁটা আকারে  বেরিয়ে আসে এবং  চেয়ার বা  টেবিলের মতো জিনিসগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।  অন্য কোনো ব্যক্তি যখন  সেই জিনিসগুলোকে স্পর্শ করে এবং  সেই হাত দিয়ে তার চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করে, তখন  রোগের জীবাণুগুলো এর মাধ্যমে  দেহের অভ্যন্তরে  প্রবেশ করে এবং তাকে সংক্রামিত করে। প্যাথোজেন জিনিসগুলিতে  প্রায় ৪৮ ঘণ্টা  বেঁচে থাকতে পারে। বয়স্কদের বিশেষ যত নিতে  হবে।  কারন  রোগ  প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে যার কারণে বৃদ্ধ ও পরিবারের অসুস্থ সদস্যদের বিশেষ যত্ন  নেয়ার পরামর্শ দেয়া  হচ্ছে। মুখ ও নাক ঢেকে রাখুন আপনার যদি ফ্লু-এর মতো লক্ষণ থাকে এবং কাশি বা ঘন ঘন হাঁচি হয় তবে সর্বদা  টিস্যু ব্যবহার করুণ এবং ব্যবহারের সাথে সাথেই এটি ত্যাগ করুন। আর, সাবান ও পানিতে হাত ধুয়ে নিন। মাস্ক স্পর্শ করবেন না আপনি যদি মুখ এবং নাক ঢাকতে মাস্ক পরে থাকেন তবে একবার এটি পরে যাওয়ার পরে খালি হাতে এটিকে স্পর্শ করবেন না। এছাড়া, মাস্কটি ব্যবহারের পরে এটি নিরাপদে সরিয়ে ফেলুন বা একবার ব্যবহারের পর তা বাতিল করুন। সঙ্গে সঙ্গে হাত ধুয়ে  ফেলুন। এক্সট্রা মাস্ক বহন করুন কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে এমন আশঙ্কা সম্পর্কে অনেকেই সিরিয়াস নয়। যদি আপনি এমন কাউকে  দেখেন যার মধ্যে ফ্লু জাতীয় লক্ষণ আছে তবে তার মুখ ঢাকতে তাকে এক্সট্রা মাস্কটি দিন। কাঁচা খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন কেবলমাত্র সঠিকভাবে রান্না করা খাবার খান এবং রান্না না করা বা অর্ধেক রান্না করা খাবার বা   মাংস জাতীয় খাবার এড়ানো উচিত।


এমনকি, আপনি যদি কাঁচা মাংস বা মৃত  প্রাণীর  কোনো অংশ স্পর্শ করেন তবে অবিলম্বে হাত ধুয়ে  ফেলুন। যেখানে সেখানে থুথু ফেলবেন না। আপনি যখন জনসাধারণের মাঝে থাকবেন তখন যেখানে সেখানে থুতু  ফেলা এড়ান। কারণ এর মাধ্যমে কেউ সংক্রামিত হতে পারে। প্রাণীদে সঙ্গে কাছাকাছি হওয়া এড়াতে হবে, খামার বা পশুর বাজারে বা যেখানে পশু কাটা করা হয় সেখানে যাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়া জীবি প্রাণী অসুস্থ তাদের সাথে সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে.।




Powered by Blogger.