কালো লোমে ভরে যাচ্ছে তাসফিয়ার দেহ, বিরল রোগে চলছে আকার্যকর হোমিও চিকিৎসা

তাসফিয়ার জন্ম থেকেই পিঠে হালকা লোম ছিল । সেটা দেখেই ছয়দিন পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পার্শ্ববর্তী জেলা নওগাঁ শহরের এক হোমিও চিকিৎসকের কাছে। সেখানে হোমিও চিকিৎসক খায়রুল বাশার তাসফিয়ার শরীরে লোম দেখে ওষুধ দেন এবং বলেন, ওষুধ খাওয়ার কয়েক দিন পর রোগটা আরও বেড়ে যাবে।
তবে কয়েক দিন পর থেকে আবার আরোগ্য হওয়া শুরু হবে। পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রায় এক-দুই বছর ওষুধ খেতে হবে। ওই চিকিৎসকের পরামর্শে এখনও নিয়মিত হোমিও ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে তাসফিয়াকে। তাসফিয়ার বয়স এখন চার বছর চার মাস। এতদিন ধরে ওষুধ খেয়েও রোগ নিরাময় তো দূরের কথা বরং তাসফিয়ার পিঠজুড়ে পশুর মতো লোম গজিয়েছে।
পাশাপাশি পিঠে একটা বিশালাকৃতির টিউমার হয়েছে।

তাসফিয়া জাহান মুনিরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা শহরের গোডাউন পাড়ার মাসুদুজ্জামান মামুনের ছোট মেয়ে।
তার এক বড় বোনও আছে। সে স্থানীয় একটি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।
তার বাবা কখনও রাজমিস্ত্রি, কখনও দিনমজুর, কখনও আবার কাজের অভাবে অলস সময় কাটান।

বাবার আর্থিক সঙ্কটের কারণে আজ পর্যন্ত সঠিক চিকিৎসকের কাছে পৌঁছাতে পারেনি তাসফিয়া। তবে আট মাস আগে তাসফিয়ার এ অবস্থা দেখে নাচোলের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম তার বাবাকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে বলেছিলেন ভালো জায়গায় চিকিৎসা করাতে। সেই টাকা পাওয়ার পর লোকমুখে তাসফিয়ার বাবা শুনেছেন অপারেশন করতে কয়েক লাখ টাকা খরচ হবে তাই চিকিৎসা না করে আরও কিছু টাকা যোগ করে তিনি মেয়ের জন্য একটি গরু কিনে রেখেছেন। এছাড়া স্থানীয়ভাবে অনেকেই মাঝে মধ্যে কিছু সাহায্য করতো তাসফিয়াকে। সেই টাকায় নিয়মিত হোমিও ওষুধ চলতো তার।

তাসফিয়ার বাবা জানান, জন্ম থেকেই তার শরীরের লোমে আবৃত। দিন দিন পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি মুখেও উঠতে শুরু করেছে।

তাসফিয়ার মা তানজিলা খাতুন জানান, পিঠের ছোট্ট একটি টিউমার থেকে এটির উৎপত্তি। পিঠের টিউমার ও শরীরে অস্বাভাবিক লোম দেখে কিছুদিন আগে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার এ অবস্থা দেখে চিকিৎসকরা মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে এটিকে বিরল চর্ম রোগ বলে শনাক্ত করেন এবং উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। কিন্তু অভাবে আর চিকিৎসা চালাতে পারিনি। এখনও হোমিও চিকিৎসাই চলছে।

তিনি আরও জানান, গরমের দিনে তাসফিয়ার শরীর থেকে আগুনের মতো তাপ বের হয়। তখন দিনে ২-৩ বার গোসল করাতে হয়। শরীরে ভেজা কাপড় পরিয়ে সব সময় ফ্যানের নিচে রাখতে হয়।

শিশুটির বাবা মামুন জানান, গত কয়েক দিন ধরে ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাসফিয়ার সংবাদটি প্রকাশ হওয়ায় অনেকেই যোগাযোগ করছেন তার সঙ্গে। ইতোমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে তার সঙ্গে। তারা সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. পাপিয়া সুলতানা জানান, শিশুটির রোগের কথা শুনেছি। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা জানান, সাফিয়ার চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার পরিবারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল্লা তাসফিয়ার বিষয়ে  জানান, শিশু তাসফিয়াকে  রাজশাহী মেডিকেল কলেজের এক চর্ম বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। নাচোলের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করছেন। তিনি তাসফিয়ার সঙ্গে তার বাবা-মাকেও যেতে বলেছেন। সেখানে নাকি সবার রক্ত পরীক্ষা করা হবে।

তাসফিয়ার বিষয়ে আরও খোঁজখবর নিয়ে কথা বলতে পারেন তার বাবা মাসুদুজ্জামান মামুনের ০১৭৬৮৮৮২৬৯১ নম্বরে।
Powered by Blogger.